- বই : কিতাবুল ফিতান ৩ খণ্ডের কালেকশন
- লেখক : ইমাম নুআইম ইবনু হাম্মাদ রহিমাহুল্লাহ
- প্রকাশনী : পথিক প্রকাশন
- Edition: 1st published, 2020
- পৃষ্টা সংখা : ১১৩৬
বইয়ের মূলভাব:
আর তোমরা ভয় কর ফিতনা-কে, যা বিশেষ করে তোমাদের মধ্যে যারা অত্যাচারী কেবল তাদেরই ক্লিষ্ট করবে না (বরং সবাইকে-ই তা গ্রাস করে নেবে) এবং জেনে রাখ যে, আল্লাহ শাস্তিদানে কঠোর।”
[সূরা আনফাল : ২৫]
আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে যখন ৭ নম্বর বিপদসংকেত জানানো হয়, তখন সমুদ্রের ট্রলারগুলো নিয়ে জেলেরা বের আর হয়না। যদিও তারা জানে, সমুদ্রে বের না হলে তার সন্তান পরিবার হয়তো না খেয়ে থাকতে হতে পারে। যখন ৯ নম্বর কিংবা ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত জানানো হয়, উপকূল এবং চর এলাকার মানুষগুলো নিজেদের ঘরের আসবাবপত্রের মায়া ত্যাগ করে আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে ঠাঁই নেয়।
কিছুটা বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির প্রয়োগ এবং বাকীটা অনুমান নির্ভর এই অগ্রীম সতর্ক সংকেত শুনে মানুষজন কতোটা চিন্তিত হয়ে পড়ে! আসন্ন বিপদ মোকাবিলা করার কতো আয়োজন! অথচ এই বিপদ সংকেত এর বিপদ কখনও আঘাত করে, আবার কখনও দূরেই মিশে যায়। শতভাগ নিশ্চয়তা কখনও দেয়না এবং শতভাগ সত্যও কখনও হয়না।
অথচ আজ থেকে প্রায় ১৪’শ বছর আগে চির সত্য, শতভাগ নিশ্চিত আছড়ে পড়ার মতো ভয়াল বিপদের সম্পর্কে সতর্ক করে গিয়েছেন এমন এক ব্যক্তি (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) , যাঁর কথা মিলবেই, সুনিশ্চিত। যাঁর একটি কথাও মিথ্যে হতে পারেনা। অথচ সেই বিপদ সম্পর্কে মানুষ আজ বড্ড উদাসীন! সেই বিপদ-কে জানার না আছে আগ্রহ, না আছে বিপদ থেকে নিজেকে, নিজের পরিবার-পরিজনকে বাঁচানোর কোনো আয়োজন!
তিনি তাঁর অনাগত উম্মতদের নিয়ে অস্থিরতা প্রকাশকরতঃ ভবিষ্যতের ফিতনা এবং ফিতনা থেকে পরিত্রাণের উপায় বলে দিয়েছেন।
পৃথিবীতে যা কিছু ঘটেছে এবং ভবিষ্যতে যা কিছু ঘটবে, তার সবকিছুই কুরআন এবং হাদিসে বলে দেয়া হয়েছে।
“আমি অবশ্যই তোমাদের প্রতি এমন গ্রন্থ অবতীর্ণ করেছি, যাতে তোমাদের জন্য উপদেশ আছে, তবুও কি তোমরা বুঝবে না?”
[সূরা আম্বিয়া : ১০]
কুরআন হাদিসে শুধু আল্লাহর ইবাদত কিভাবে করতে হবে সেই সম্পর্কেই বলা হয়নি। বিভিন্ন যুগ, সমকালীন মানুষ, সমাজ, তার অবস্থাও কুরআনে বলে দেয়া হয়েছে। সেই বিষয়গুলোকে গভীর ভাবে উপলব্ধি করে মিলিয়ে নেয়ার চিন্তা চেতনা প্রয়োজন।
ফিৎনা পূর্ণ এসময়ে আমরা ফিতনা নিয়ে অনেক কথা হয়তো বলি-শুনি, কিন্তু ফিতনা কি জিনিস, তার আসল পরিচয় আমাদের জানা না থাকার কারণে হাদিসে বলে দেয়ার পরও আমাদের হুশের উদয় হয়না।
‘শেষ যামানা বা আখেরি যামানা, শেষ যামানার ফিতনা’- এর নাম আমরা প্রায়ই শুনি। কিন্তু কেউ-ই এ কথা উপলব্ধি করতে পারিনা যে, শেষ যামানা বা আখেরি যামানা কোনটা, কখন থেকে আখেরি যামানা শুরু হবে? শেষ যামানা বললেই মনে হয় আজ থেকে আরও কয়েক হাজার বছর পর যেই যামানা শুরু হবে, সেটাই শেষ যামানা। অথবা আমার সময়টি নয়, আমার যুগ, আমার সন্তানের যুগ, আমার নাতিপুতির যুগ শেষ হওয়ার পর হয়তো আখেরি যামানা আসতে পারে।
তাই রাতের অন্ধকারের ন্যায় গ্রাস করতে থাকা ফিতনার অন্ধকারের এই সময়ে আজ যদি কাউকে বলা হয়, এটাই শেষ যামানা। শেষ যামানার যে ভয়ানক ফিতনার কথা হাদিসে উল্লেখ আছে, এখনই সে যুগের দামামা বাজতেছে। বর্তমানে আমরা যেসব সমস্যার ভিতর দিয়ে জীবন পরিচালনা করছি, এটাই আখেরি যামানা। তবে আপনি বিশ্বাস করাতে সক্ষম হবেন না। বরং আপনার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকবে। অবস্থা এমন – বলে কি এসব? পাগল নাকি! এটা তো আধুনিক যুগ, ডিজিটাল যুগ! অন্ধকার থেকে আলোর শুরু। অন্ধকার ধেয়ে আসার যুগ কেন হবে?
আপনাকে এমন কিছুই শুনতে হবে। কারণ আরাম আয়েশে মোহ আমাদের এমন এক অবস্থার সৃষ্টি করেছে যে আমাদের ঈমানকে সংহত রাখা, টিকিয়ে রাখা, হাতের মুঠোয় অঙ্গার রাখার ন্যায় কঠিন করে তুলেছে। এবং এই উপলব্ধি টা আমাদের খুব কম মানুষের মনেই ধাক্কা দেয়।
ফিতনা এর অর্থ বুঝতে গেলে দেখা যাবে আমাদের সম্পদ,সন্তানাদিও আমাদের ফিতনার কারণ। আর সেই উপলব্ধি টা বুঝবো কিভাবে? এমনকি কুরআনে কিছু সন্তানাদি ও স্ত্রীলোকদেরকে আমার শত্রুও বলা হয়েছে। হাদিসে বলা হয়েছে ফিতনা। আমাদেরকে কে বলে দিবে আমাদের প্রতিবেশী, সম্পদ, পরিবার, স্ত্রী, আমাদের জন্য ফিৎনা কিভাবে? ফেসবুক, ইউটিউব, টেলিভিশন, বিভিন্ন মতবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ, গণতন্ত্র একেকটি ফিতনা, যা আমাদের শরীরের চামড়ার ন্যায় ল্যাপ্টে আছে হাদিসের বাণী অনুসারে। যা আমরা বিচ্ছিন্ন করতে পারছি না। কে বুঝিয়ে দিবে এই বিষয়গুলো৷ কে অনুভূতির দেয়ালে ধাক্কা দিয়ে উপলব্ধি করিয়ে দিবে?
এই ধাক্কা দেয়ার মতো একটি গ্রন্থ “#কিতাবুল_ফিতান”। এই বইটিকে ফিতনা বিষয়ক এনসাইক্লোপিডিয়া বলা যায়। বইটি মূলত ফিতনা সংক্রান্ত হাদিসের রেফারেন্স বুক। যাতে লেখক তাঁর থেকে রাসূল (স.), তাবেঈন, তাবে-তাবেঈন পর্যন্ত সনদ উল্লেখ করেছেন।
বইটি ৩ টি খন্ডের প্রথম খন্ডে নবীজির মৃত্যুর পরবর্তী সময় থেকে নিয়ে খিলাফত এর সময়য়ের বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন। কিভাবে বনু উমাইয়া বাদশাহদের যুগ শুরু এবং তাদের বর্ণনা এবং বনু উমাইয়া বাদশাহীর পতন। বনু আব্বাসের আবির্ভাব এবং আব্বাসী খিলাফত এর পতন। তুর্কীদের আত্মপ্রকাশ এবং কোন কোন ফিতনা প্রকাশ পেয়েছিলো এবং তাদের সমাপ্তি হলো। এই বিষয়গুলো অনেকটা দলিল ভিত্তিক ইতিহাস এর স্বাদ দিবে।
তাছাড়াও, খলিফাদের বৈশিষ্ট্য, খলিফাদের চেনার উপায়, রাসূল (স.) এর পরবর্তী বাদশাহ ও খলিফাদের তালিকাও এতে রয়েছে।
ইতোমধ্যে ঘটে আবির্ভূত হওয়া ইতিহাস ভিত্তিক ফিতনাগুলোর পর দ্বিতীয় এবং তৃতীয় খন্ডে রয়েছে ভবিষ্যতে পর্যায়ক্রমে কিয়ামত দিবসের আগ পর্যন্ত যত ফিতনার আবির্ভাব হবে, সেগুলো রেফারেন্স ভিত্তিক আলোচনা।
সুবিজ্ঞ আলেম ও বিদগ্ধ লেখক বইটিতে ইমাম মাহদি ও দাজ্জাল বিষয়ক নবীজির ভবিষ্যৎ বাণীগুলোকে যথাযথ বিশ্লেষণের মাধ্যমে রেফারেন্স সহ উপস্থাপন করেছেন। শেষ যামানার ফিতনা ও মাহদি-দাজ্জাল সম্পর্কে নবীজির বলা কথাগুলোকে লেখক বিশ্লেষণ করে দেখিয়ে দিয়েছেন কোনটি মাহদি মিশন আর কোনটি দাজ্জালি মিশন। লেখক দিনের আলোর মতো করে স্পষ্ট করে দিয়েছেন, কারা মাহদি মিশনের পক্ষে কাজ করছে আর কারা দাজ্জালি মিশনের নেতৃত্ব ও সঙ্গ দিচ্ছে।
দাজ্জাল বিশেষ এক ব্যক্তির নাম৷ অনুরূপ মাহদিও নির্দিষ্ট একজন লোক হবেন। কিন্তু দাজ্জালি মিশন আর মাহদি মিশন পরস্পরবিরোধী দুটি শক্তি। ইসলাম ও ইসলামের বিজয় হলো মাহদি মিশন। আর তার বিপরীতটা দাজ্জালি মিশন। এর কোনোটাই হঠাৎ আবির্ভূত হবেনা। বরং দুটি মিশনই দুটি চলমান বিষয়। মাহদি মিশনও এখনও চলছে, চলছে দাজ্জালি মিশনও। দাজ্জালি মিশনের বহু ফিৎনা ক্রমান্বয়ে আবির্ভূত হচ্ছে। ইমাম মাহদি ও দাজ্জালের আবির্ভাবের পর এই মিশন চূড়ান্ত রূপ লাভ করবে। তখন মাহদি মিশনের বিজয় অর্জিত হবে। লেখক চলমান এই দুই মিশনে মুসলিমদের করণীয় সম্পর্কেও নবীজির দেখানো পথনির্দেশনা গুলো তুলে ধরেছেন।
ইমাম মাহদি ও দাজ্জাল সম্পর্কে আল্লাহর রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেসব ভবিষ্যৎ বাণী ব্যক্ত করে গিয়েছেন, কিয়ামত দিবসের আগ পর্যন্ত যত ধরণের ফিতনা মানুষকে গ্রাস করবে, সেই সম্পর্কে পূর্ণ সতর্ক করে গিয়েছেন। সেগুলো জানা এবং সে সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমানের একান্ত আবশ্যক।
অন্যথায় সময়ের চাহিদা অনুপাতে সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া এবং যথাযথ পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ গ্রহণ করা অসম্ভব হবে, বর্তমান মুসলিম উম্মাহ যার শিকার।
দাজ্জাল অনতিবিলম্বে আত্মপ্রকাশ করুক বা বিলম্বে, তার আগে দাজ্জালের ফিতনা থেকে বেঁচে থাকা এবং এর জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য জরুরী। কারণ, দাজ্জালের আগমনের আগে যেসব ফিতনার উদ্ভব ঘটবে, তাতেই হক ও বাতিল আলাদা হয়ে যাবে। দাজ্জালের আত্মপ্রকাশের আগে যারা সত্যের বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত হয়ে যাবে, দাজ্জাল তাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।
কোনটা দাজ্জালি কাজ আর কোনটা মাহদি মিশনের অংশ, কোনটা ফিৎনার চাদরে ঢাকা অন্ধকার পথ আর কোনটা নবীজির সতর্ক করে দেয়া নির্দেশিত আলোকিত পথ, যদি আমাদের জানা না থাকে তাহলে আমরা বিভ্রান্তির গভীর খাদে পড়ে ধ্বংস হতে বাধ্য হবো।
বর্তমান যুগটি ফিতনার করাল গ্রাসে আচ্ছন্ন যুগ। যেন আমাবস্যার অন্ধকার রাতের মত একেকটি ফিতনা আমাদের গ্রাস করে নিচ্ছে। আমাদের ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন, রাষ্ট্রীয় জীবন এবং আন্তর্জাতিক জীবন পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে আজ ফিতনার আনাগোনা।
রোগ সম্পর্কে না জানলে রোগীর জন্য সঠিক ব্যবস্থাপত্র তৈরি করা অসম্ভব। যে ফিতনা সম্পর্কেই জানে না, সে কীভাবে নিজেকে বাঁচাবে ফিতনা থেকে? আর কীভাবে বাঁচাবে পরিবার-পরিজন ও সমাজকে? আর শেষ যামানার ফিতনাগুলো এতোই ভয়াবহ যে, একজন লোক দিনের শুরুতে মুসলিম থাকবে, কিন্তু দিন শেষে সে পরিণত হবে কাফিরে কিংবা রাতের শুরুতে সে মুসলিম ছিলো, সকালে সূর্যোদয় হবে তার কাফির অবস্থায়! আমাদেরকে রাসূলে কারীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রায় ১৪’শ বছর আগে ফিতনা সম্পর্কে সতর্ক করেছেন; অথচ আমাদের হুশ নেই। এখনও আমাদের স্বপ্ন জুড়ে কেবলই দুনিয়া আর দুনিয়ার ভোগ বিলাশ ! অথচ ফিতনা আমাদের দোরগোড়ায় হাজির। ফিতনা সম্পর্কে রাসূল (স.) এর ভবিষ্যতবাণী জানতে ও ফিতনার যুগে করণীয় সম্পর্কে জানতে নুআইম বিন হাম্মাদ রচিত “কিতাবুল ফিতান” বইটি হতে পারে পথভোলা পথিকদের অন্ধকারাচ্ছন্ন পথের মশাল।
যারা ফিতনা সম্পর্কে জানতে চান ও সতর্ক হতে চান, তাদের জন্য বইটি হবে অনন্য। “কিতাবুল ফিতান” এ- বিষয়ে জ্ঞানার্জনের একটি চমৎকার মাধ্যম। কালজয়ী এই গ্রন্থটি সংকলন করেন ইমাম নুআইম ইবনু হাম্মাদ (রহ.)। তিনি ছিলেন দ্বিতীয় হিজরি শতকের শেষের দিককার আহলুস সুন্নাহর একজন সংগ্রামী ইমাম, যিনি ছিলেন সুন্নাহর উপর পাহাড়ের মতো অবিচল। জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত অবিচল থাকেন ফিৎনার মোকাবিলায়। এবং ফিৎনার মোকাবিলায় বন্দি অবস্থায়-ই শাহাদাতের অমীয় সুধা পান করেন।
Reviews
There are no reviews yet.